পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা, পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়াছুড়ি; কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আজ চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। প্রাণঘাতী সংঘর্ষে দুই দেশের মধ্যে অন্তত ২৪৮ জন নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এর মধ্যে ইরানে মারা গেছে ২২৪ জন, যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলে নিহত হয়েছে অন্তত ২৪ জন, আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল প্রথম আক্রমণ শুরু করে, ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানের পক্ষ থেকে এই হামলাকে “ঘোষণাবিহীন যুদ্ধ” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
চলমান লড়াইয়ে আজকের পরিস্থিতি:
১৬ জুন সকাল থেকে নতুন করে তেল–আভিভ, হাইফা, ও ব্যাট ইয়ামে ইরান ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সক্ষম হলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র রাজধানী ও বাণিজ্যিক শহরগুলোতে আঘাত হানে, এতে সাধারণ মানুষ হতাহত হয়।
ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ভয়াবহ:
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত হামলায় আহত হয়েছে ১,২৭৭ জনেরও বেশি মানুষ। দেশজুড়ে মসজিদ, স্কুল এবং মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে। তেহরান ও ইসফাহানের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
পরিসংখ্যান (১৬ জুন পর্যন্ত)
| দেশ | নিহত | আহত | বেসামরিক ক্ষতি |
|---|---|---|---|
| ইরান | ২২৪ জন | ১,২৭৭+ | পারমাণবিক কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি, আবাসিক এলাকা |
| ইসরায়েল | ২৪ জন | ৫০০+ | তেল–আভিভে ভবন ধস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত |
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
এই যুদ্ধ ঘিরে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
- জাতিসংঘ মহাসচিব যুদ্ধবিরতি আহ্বান করেছেন।
- চীন ও রাশিয়া উভয়েই ‘সর্বোচ্চ সংযম’ বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
- যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি, তবে ইসরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জি-৭ নেতারা জরুরি বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষণ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত কেবল সীমান্ত লড়াই নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে চলমান লড়াইয়ের প্রকাশ। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা এবং তা থেকে উদ্ভূত প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।